একটু আগেই মসজিদুল হারামে মাগরিবের সালাত শেষ হলো। প্রথম রাক'আতে ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করেছেন সুরা আদ-দোহা ।
সব আয়াত একবার করে তিলাওয়াত করে গেলেও, সুরা আদ-দোহার শেষ আয়াত তিলাওয়াত করেছেন দুইবার। এবং আমার মনে হয়েছে— আয়াতটা যখন তিনি দ্বিতীয়বার তিলাওয়াত করছিলেন, তার গলাটা একটুখানি ধরে এসেছিলো। একটা চাপা কান্নাকে গিলে ফেললে যেমনটা হয়, সেরকম।
ইমাম সাহেব কেনো এই আয়াত দুইবার তিলাওয়াত করেছেন আমি জানি না। তিনি কোনো কান্নাকে চাপা দিতে চেয়েছিলেন কি-না তা-ও আমি নিশ্চিত বলতে পারি না, তবে আয়াতটা যে হাহাকার আমার বুকের ভেতরে তৈরি করেছে তা শেষ হয়েছে চোখ বেঁয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুতে এসে।
আয়াতটা হলো— 'ওয়া আ-ম্মা বি'নি-মাতি রব্বিকা ফাহাদ্দিস'। অর্থাৎ— 'আর (হে রাসুল), আপনি আপনার রবের অনুগ্রহের কথা ব্যক্ত করতে থাকুন'।
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে বলছেন যে, তিনি যেন আল্লাহর অনুগ্রহ স্বীকার করে এবং কৃতজ্ঞ থাকে। ইমাম সাহেব যখন এই আয়াত দ্বিতীয়বার খানিকটা জোর দিয়ে তিলাওয়াত করলেন, আমার মনে হলো তিনি বুঝি আমাকে উদ্দেশ্য করেই এটা করেছেন। যেন আমার মনকে উতালপাতাল করে দেওয়া যায়। চৈত্রের খরতাপে রুক্ষ হয়ে থাকা যমিনের মতোন আমার হৃদয়ে যেন একটা কালবৈশাখীর ঝড় উঠে, সেইজন্যেই বোধকরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা তাকে দিয়ে এই আয়াত দ্বিতীয়বার ওমন করে তিলাওয়াত করিয়েছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালার কোন রহমতটা জীবনে পাইনি আমি? একটা ভালো ক্যারিয়ার, নাম-যশ-খ্যাতি, অনিঃশেষ আরাম-আয়েশ, একটা ভালো, গোছানো সংসার, বাবা-মা'র সেবা-যত্ন করার সুযোগ, দ্বীনদার স্ত্রী, অনেক অনেকগুলো দিল-দরিয়া ভাই-বন্ধু-শুভাকাঙখী। এতো এতো নিয়ামাতের বিপরীতে আমার শুকরিয়া ঠিক কতোখানি? কতোখানি আমি পেরেছি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে?
আয়াতটা শুনে বুকের ভেতরটা আমার মোচড় দিয়ে উঠেছে। মনে হয়েছে আমি তো কোন শুকরিয়াই জ্ঞাপন করি না আমার রবের। যে নিয়ামত, যে বারাকাহ তিনি আমার জীবনে দিয়েছেন, একটা আস্ত জীবন সিজদাহতে লুটিয়ে পড়ে থাকলেও কি তার শুকরিয়া জ্ঞাপন শেষ হবে?
আহা! আমার রবের দয়া কতোই না বিশাল আর বান্দা হিশেবে আমরা কতোই না অকৃতজ্ঞ!
.
'আমার উমরাহ সফরের ডায়েরি-০৩'
No comments:
Post a Comment