Thursday, 25 July 2019

'মজার ব্যাপার হচ্ছে, শয়তান যে জিনিসটা সবচাইতে ভালো বুঝে সেটা হলো মানুষের সাইকোলোজি।

1.
'মজার ব্যাপার হচ্ছে, শয়তান যে জিনিসটা সবচাইতে ভালো বুঝে সেটা হলো মানুষের সাইকোলোজি। 
সে জানে মানুষ কিসে প্রলুব্ধ হয়, কিসে তার আগ্রহ। মানুষের সাইকোলোজি বুঝেই শয়তান নিজের টোপ ফেলে। যেমন, আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামকে সৃষ্টি করার পরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা তাদের জান্নাতে থাকতে দিয়েছিলেন। তবে, সাথে জুড়ে দিয়েছেন একটা শর্ত, একটা নিষেধাজ্ঞা। কি ছিলো সেই শর্ত? জান্নাতের সবখানে তারা বিচরণ করতে পারবে, ঘুরে বেড়াতে পারবে, সবকিছুই ভোগ করতে পারবে, তবে নির্দিষ্ট একটা গাছের কাছে তারা যেতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা মেনেই আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালাম জান্নাতে থাকতে শুরু করলেন। এই নিষেধাজ্ঞার ভিতর থেকেই শয়তান নিজের চালটা বের করে আনলো।
জান্নাতের পরমানন্দে অভিভূত হয়ে যান আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালাম। আহা! স্বপ্নও তো এতো সুন্দর হয়না। সেই অপরূপ নৈসর্গিগ স্বর্গোদ্যানে তারা খুব আনন্দের সাথেই দিন কাটাতে লাগলেন। এমনই আনন্দমুখর একটা দিনে, একদিন ইবলিশ শয়তান তাদের কাছে এলো। বললো, ‘আল্লাহ যে তোমাদের ঐ গাছটির নিকটে যেতে বারণ করলেন, তার কারণ জানো? তার কারণ হলো- তোমরা যদি ঐ গাছটার কাছে যাও এবং ঐ গাছের ফল খাও, তাহলে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে, নয়তো তোমরা এখানে চির অমর হয়ে যাবে। যাতে তোমরা ফেরেশতা বনে যাওয়া কিংবা চির অমর হওয়ার সুযোগ না পাও, সেজন্যেই কিন্তু আল্লাহ তোমাদের ঐ গাছের কাছে ঘেঁষতেও নিষেধ করেছেন’।
বলা বাহুল্য, সৃষ্টিগতভাবেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই বেশি। তারা হয়তো ভাবলো, ‘এতো পরমানন্দের সবখানে যাওয়ার, সবকিছু ছোঁয়ার, সবকিছু করার অনুমতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা দিয়েছেন, তাহলে কেবল ওই গাছটার নিকটেই বা কেনো যেতে বারণ করলেন? কি এমন আছে ওই গাছটায়?’
বুদ্ধিতে শয়তান মানুষের চেয়ে আরো কয়েক কাঠি সরেস। সে আরো বললো, ‘আমি কিন্তু তোমাদের শুভাকাঙ্খী। তোমাদের ভালো চাই বলেই কিন্তু কথাগুলো বললাম’। শয়তান যার শুভাকাঙ্খী হয়ে যায়, তার কি আর নতুন করে শত্রুর দরকার পড়ে? আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামেরও নতুন শত্রুর দরকার পড়েনি। শয়তানের এহেন প্ররোচনায় প্রতারিত হয়ে তারা দু’জনে শেষ পর্যন্ত ওই গাছের ফল খেয়ে বসে এবং জান্নাত থেকেই বিচ্যুত হয়।
শয়তানের প্ররোচনার ব্যাপারটা খেয়াল করুন। সে কিন্তু খুব সাধাসিধে, স্পষ্টভাষী, এবং হিতাকাঙ্ক্ষী সেজেই আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামের কাছে এসেছিলো, এবং তাদের সাইকোলোজি বুঝেই তাদের জন্য টোপ ফেলেছিলো। একটা নিষিদ্ধ জিনিসকে আকর্ষণের বস্তু বানিয়ে সেটার সাথে এমন দুটো জিনিসকে সে জুড়িয়ে দিয়েছে যা ক্ষণিকের জন্য আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামের মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। ফেরেশতা হয়ে যাওয়া কিংবা চির অমর হয়ে থাকা। মুহূর্তের জন্য এই দুটোর জন্য প্রলুব্ধ হয়ে উঠে তাদের মন। ফলে, তারা তাদের কৃত ওয়াদা ভুলে যায়, এবং ওই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে বসে।
বাস্তব জীবনে শয়তানের চালগুলো এমনই। সে মানুষকে এভাবেই বিভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট করে থাকে। সে কখনোই আপনার শত্রু বেশে আপনার সামনে হাজির হবেনা। সে আপনার সামনে আপনার চির হিতৈষী, চির শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে উপস্থিত হবে। সে প্রথমেই আপনার মন বুঝে নিবে। আপনি কোন জিনিসের প্রতি আসক্ত, আকর্ষিত সেটা জেনে নিয়ে, সেই মোতাবেক শয়তান আপনার জন্য টোপ ফেলবে।
সে আপনার মনে এই ধারণার উদয় করিয়ে দিবে যে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। আপনাকে সে বোঝাবে- ‘দেখ বাপু! হতে পারে দূর্গাপূজা হিন্দুদের উৎসব। সেই উৎসবে গেলে তুমিও যে হিন্দু হয়ে যাবে, এমনটি কিন্তু কোথাও লেখা নেই। তুমি সেখানে গেলেই যে তোমার মুসলমানিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়বে, তাও না। এটাকে তুমি হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব হিশেবে না দেখে কেবল একটা সাধারণ উৎসব হিশেবেই দেখো। তোমার বাড়ির পাশের একটা উৎসবই মনে করো। মনে করো সেখানে একটা মেলা হচ্ছে। তোমার সাদা মনে তো আর কোন কাঁদা নেই, তাইনা? ওই দেবীকে তো তুমি পূজোও করছোনা, তার পায়ে মাথাও ঠেকাচ্ছো না। কেবল একটু চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যেই যাচ্ছো। আরো কতোজনই তো যায়। এতে কি তাদের জাত যাচ্ছে, না ধর্ম লোপ পাচ্ছে?’
অথবা, শয়তান আপনাকে ওয়াসওয়াসা দিতে পারে এই বলে যে, ‘পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঘ-ভাল্লুক আর পেঁচার প্রতিমূর্তি মাথায় নিয়ে মিছিল করার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। বরং, এগুলো তোমাকে দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখাবে। তোমার মতোন কতো মুসলমানই তো এসব উৎসবে যায়, তাদের কি ধর্ম চলে গেছে?’
নতুবা, শয়তান আপনাকে বলবে, ‘একজন পর-নারীর সাথে বসে দু’দন্ড গল্প করলে, একটু সুখ-দুঃখের কথা বললে, দু’জনে কোথাও ঘুরতে গেলে, হাত ধরাধরি করে পার্কে হাঁটলে পাপ হয় না। তুমি তো আর তার সাথে অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছো না। তোমার মনে তো এরকম কোন অসৎ অভিপ্রায় নেই। তুমি তো তাকে কেবল বন্ধুই ভাবো। ছোটবোনের মতোই দেখো। তাহলে, তার সাথে এহেন সম্পর্ক রাখতে দোষ কি?’
শয়তানের টোপগুলো এমনই। আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী সেজে, আপনাকে আপাতঃ ‘ভালো বুদ্ধি’ দিয়ে সে আপনাকে দূর্গোপূজোয় নিয়ে ছাড়বে। পহেলা বৈশাখের বাঘ-ভাল্লুক আর পেঁচার মূর্তি মাথায় আপনাকে দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করাবে। আপনাকে সে পর-নারীর কাছাকাছি, পাশাপাশি নিয়ে যাবে আপনার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বুঝে। এভাবেই মূলত শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করে যার ওয়াদা সে আল্লাহর সাথে করেছিলো। ‘এবং আমি অবশ্যই তাদের পথভ্রষ্ট করবো’- আন নিসা ১১৯
[ অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি থেকে নেওয়া ]
লেখকঃ 
আরিফ আজাদ

No comments:

Post a Comment

মসজিদুল হারামে মাগরিবের সালাত শেষ হলো। প্রথম রাক'আতে ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করেছেন সুরা আদ-দোহা ।

  একটু আগেই মসজিদুল হারামে মাগরিবের সালাত শেষ হলো। প্রথম রাক'আতে ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করেছেন সুরা আদ-দোহা । সব আয়াত একবার করে তিলাওয়াত কর...