Tuesday, 26 April 2022

মসজিদুল হারামে মাগরিবের সালাত শেষ হলো। প্রথম রাক'আতে ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করেছেন সুরা আদ-দোহা ।

 


একটু আগেই মসজিদুল হারামে মাগরিবের সালাত শেষ হলো। প্রথম রাক'আতে ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করেছেন সুরা আদ-দোহা ।

সব আয়াত একবার করে তিলাওয়াত করে গেলেও, সুরা আদ-দোহার শেষ আয়াত তিলাওয়াত করেছেন দুইবার। এবং আমার মনে হয়েছে— আয়াতটা যখন তিনি দ্বিতীয়বার তিলাওয়াত করছিলেন, তার গলাটা একটুখানি ধরে এসেছিলো। একটা চাপা কান্নাকে গিলে ফেললে যেমনটা হয়, সেরকম।

ইমাম সাহেব কেনো এই আয়াত দুইবার তিলাওয়াত করেছেন আমি জানি না। তিনি কোনো কান্নাকে চাপা দিতে চেয়েছিলেন কি-না তা-ও আমি নিশ্চিত বলতে পারি না, তবে আয়াতটা যে হাহাকার আমার বুকের ভেতরে তৈরি করেছে তা শেষ হয়েছে চোখ বেঁয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুতে এসে।

আয়াতটা হলো— 'ওয়া আ-ম্মা বি'নি-মাতি রব্বিকা ফাহাদ্দিস'। অর্থাৎ— 'আর (হে রাসুল), আপনি আপনার রবের অনুগ্রহের কথা ব্যক্ত করতে থাকুন'।

 
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে বলছেন যে, তিনি যেন আল্লাহর অনুগ্রহ স্বীকার করে এবং কৃতজ্ঞ থাকে। ইমাম সাহেব যখন এই আয়াত দ্বিতীয়বার খানিকটা জোর দিয়ে তিলাওয়াত করলেন, আমার মনে হলো তিনি বুঝি আমাকে উদ্দেশ্য করেই এটা করেছেন। যেন আমার মনকে উতালপাতাল করে দেওয়া যায়। চৈত্রের খরতাপে রুক্ষ হয়ে থাকা যমিনের মতোন আমার হৃদয়ে যেন একটা কালবৈশাখীর ঝড় উঠে, সেইজন্যেই বোধকরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা তাকে দিয়ে এই আয়াত দ্বিতীয়বার ওমন করে তিলাওয়াত করিয়েছেন।
 
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালার কোন রহমতটা জীবনে পাইনি আমি? একটা ভালো ক্যারিয়ার, নাম-যশ-খ্যাতি, অনিঃশেষ আরাম-আয়েশ, একটা ভালো, গোছানো সংসার, বাবা-মা'র সেবা-যত্ন করার সুযোগ, দ্বীনদার স্ত্রী, অনেক অনেকগুলো দিল-দরিয়া ভাই-বন্ধু-শুভাকাঙখী। এতো এতো নিয়ামাতের বিপরীতে আমার শুকরিয়া ঠিক কতোখানি? কতোখানি আমি পেরেছি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে?
আয়াতটা শুনে বুকের ভেতরটা আমার মোচড় দিয়ে উঠেছে। মনে হয়েছে আমি তো কোন শুকরিয়াই জ্ঞাপন করি না আমার রবের। যে নিয়ামত, যে বারাকাহ তিনি আমার জীবনে দিয়েছেন, একটা আস্ত জীবন সিজদাহতে লুটিয়ে পড়ে থাকলেও কি তার শুকরিয়া জ্ঞাপন শেষ হবে?
আহা! আমার রবের দয়া কতোই না বিশাল আর বান্দা হিশেবে আমরা কতোই না অকৃতজ্ঞ!
.
'আমার উমরাহ সফরের ডায়েরি-০৩'

আরিফ আজাদ

Saturday, 19 June 2021

দ্বীনে প্রবেশের শুরুতে আমার সামনে দুটো সার্কেল এসে হাজির হয়।

 [১]

দ্বীনে প্রবেশের শুরুতে আমার সামনে দুটো সার্কেল এসে হাজির হয়। হাজির হয় বলাটা ঠিক নয় আসলে, দুটো ভিন্ন ধারার সার্কেলের সাথে মিশবার সুযোগ তখন আমার সামনে আসে। এই দুই সার্কেলের যেকোন একটিকে বেছে নিয়ে, জীবনের বাকি পথ আমাকে পাড়ি দিতে হবে।
দুটো সার্কেলের প্রথম সার্কেলের সকলে নামায-কালাম পড়েন, দ্বীন নিয়ে ফিকির করেন, কথা-বার্তাও বলেন, দ্বীন নিয়ে কাজও করেন, কিন্তু একইসাথে আমি আবিষ্কার করলাম— তারা বক্স অফিস হিট করা মুভি না দেখেও থাকতে পারেন না। তারা ওমর মুখতার হওয়ার স্বপ্ন লালন করেন অন্তরে, তবে মোশাররফ করিমের ঈদের নাটক না দেখলে তারা কেমন যেন শান্তি পান না। দ্বীনের বাহ্যিক ব্যাপারে অনেকবেশি সিরিয়াসনেস আমি তাদের ভিতর দেখেছি ঠিক, কিন্তু দ্বীনের ভেতরে ঢুকে, নিজের জীবনে দ্বীন দ্বারা যে মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি, আমার মনে হয়েছে, তা থেকে তারা খানিকটা বিচ্যুত কিংবা পিছিয়ে আছে।
দ্বিতীয় সার্কেলটা মা শা আল্লাহ একেবারে অন্যধারার। আমি তাদেরকে দ্বীনের ভিতরের এবং বাইরের— সকল ব্যাপারে সমান সিরিয়াস হতে দেখেছি। তাদের আলাপে কখনো মুভির কথা থাকে না, তারা মোশাররফ করিমের ভক্তও নয়। নাটক-সিনেমার জন্যও তাদেরকে উদগ্রীব হয়ে থাকতে দেখিনি কোনোদিন। তারা গান তো শুনেই না, বাদ্য-বাজনা সহ যেসব ইসলামি সঙ্গীত বাজারে আছে, তা থেকেও তাদেরকে সর্বদা দূরে থাকতে দেখেছি। পর্দার ব্যাপারে তারা একবিন্দু ছাড় দেয় না।
আমার মনে হলো— এই দুই সার্কেলের মাঝে শেষোক্ত সার্কেলটাই আমাকে দ্বীনের পথে বেশি এগুতে সাহায্য করবে এবং নিজেকে 'আরো ভালো মুসলিম' হিশেবে গড়ে তুলতে আমাকে প্রথম সার্কেলটার তুলনায় দ্বিতীয় সার্কেলটা সাহায্য করতে পারে অনেক বেশি। ফলে, দ্বীনের পথে হাঁটবার জন্য আমি দ্বিতীয় সার্কেলটাকে বেছে নিলাম এবং তাদের সাথেই চলতে ফিরতে শুরু করলাম।
[২]
আপনি বলতে পারেন, 'আপনার এক বন্ধু নাহয় মুভি দেখে, তার সাথে মিশলে যে আপনিও মুভি দেখতে শুরু করবেন, তা কেনো? নিজের ওপর আপনার তো এটুকু নিয়ন্ত্রণ থাকা চাই'।
আপনার এই যুক্তিটার সাথে আমি আসলে জোরালোভাবে দ্বিমত করি, এবং বিশ্বাস করি— এটা যতোখানি না যুক্তি, তারচে বেশি ইবলিশের ওয়াসওয়াসা।
আসলে, ঈমান আর দ্বীন পালন জিনিস দুটো এমন যে— এগুলোর ব্যাপারে ইবলিশকে বিন্দুমাত্র সুযোগও দেওয়া যাবে না। আপনার মুভিখোর, কিন্তু নামাজী বন্ধুটার সাথে মিশলে আপনি হয়তো একদিন, দু'দিন, তিনদিন মুভি না দেখে থাকতে পারবেন, কিন্তু এরইমধ্যে ইবলিশ আপনাকে এমনভাবে ওয়াসওয়াসা দেওয়া শুরু করবে যে— একটা সময় আপনি ভাবতে শুরু করবেন, 'যাক, এই মুভিটার এতো নাম করছে ওরা, আমির খান নাকি একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছে! দেখে ফেলি একটু। তবে এটাই শেষ। যতো-ই নাম করুক, আর কোনোদিন আমি মুভি-মুখী হবো না'।
অথবা, কোন নাটক কিংবা এমন ড্রামা সিরিজ যা আপনি দেখতে না চাইলেও, বন্ধু মহলের সকলে সোৎসাহে দেখছে বলে আপনারও একবার মনে হতে পারে— 'একবার দেখেই ফেলি নাহয়'।
এভাবে আপনি ইবলিশের ফাঁদে পা দিয়ে দেন এবং আস্তে আস্তে ওই দুনিয়ায় আসক্ত হয়ে যান। আপনি নামাজ পড়েন, যিকির আযকার করেন, কুরআন তিলাওয়াত করেন, দ্বীন নিয়েও ভাবেন। তবে একইসাথে আপনি মুভিও দেখেন, গানও শুনেন, নাটক দেখাও বাদ দিতে পারেন না।
কোন মুভি-খোর, নাটক-গান নিয়ে থাকা দ্বীনি বন্ধুটার সাথে মিশে অন্তত আর যা-ই হোক, ইবলিশকে এই সুযোগটা দিতে আমি রাজি নই। নিজের দ্বীনকে হেফাযতের জন্য এ-ধরণের প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে এমন বন্ধুর সাথে নিয়মিত চলাফেরা, ঘোরাফেরা, উঠা-বসা বাদ দিতেই বা কমিয়ে আনতেই আমি বেশি আগ্রহী।
[৩]
যারা দ্বীনকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়, দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে এমন লোকদের সাথেই কেনো আপনার মেশা উচিত সে ব্যাপারে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহর বেশ সুন্দর একটা কথা আছে। তিনি বলেছেন—
'দ্বীনদারদের সাথে মিশলে আপনার ছয়টা উপকার হবে।
এক. তাদের সঙ্গ আপনার ভেতরে দ্বীন নিয়ে থাকা সন্দেহ দূর করে আপনার ঈমানকে আরো মজবুত করবে।
দুই. তাদের সঙ্গ আপনার ভেতর থেকে রিয়া দূর করে, তাকওয়া বাড়িয়ে দেবে।
তিন. তাদের সঙ্গ পেলেই আপনার ভেতরে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত হবে।
চার. তাদের সঙ্গ আপনার ভেতর থেকে দুনিয়ার আসক্তি কমিয়ে, আপনাকে অধিক আখিরাত-মুখী করে দেবে।
পাঁচ. তাদের সাথে থাকলে আপনি উদ্ধ্যত না হয়ে বরং অধিক কোমল আর বিনয়ী হবেন।
ছয়. তাদের সঙ্গ আপনাকে মন্দ ধারণা থেকে বাঁচিয়ে, সু-ধারণার দিকে ধাবিত করাবে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহর বর্ণনা করা এই লিটমাস টেস্ট দিয়ে যদি আমি আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী-সাথী নির্ধারণ করতে যাই, আমাকে তাহলে মোটাদাগে কয়েকটা জিনিস দেখতে হবে-
১. আমার বন্ধুটাকে দেখলে আমার কি আখিরাতের কথা স্মরণে আসে নাকি দুনিয়াবি বা গতানুগতিক ধারণাই মনে আসে?
২. সে কী আমাকে আল্লাহর কথা বেশি স্মরণ করায়, না দুনিয়ার কথা?
৩. সে কি এমনকিছুতে আসক্ত যা তার এবং আমার— দুজনের দ্বীনের কোন উপকারেই আসবে না? যেমন- মুভি দেখা, গান শোনা, অহেতুক আড্ডাবাজি ইত্যাদি।
৪. সে কি অধিকবেশি নেতিবাচক মনোভাবের? মানুষের ব্যাপারে কটু কথা, কটু-বাক্য প্রয়োগে সে কি লাগামছাড়া?
মোদ্দাকথা, তাকে দেখলে আমার কি অধিক বেশি দ্বীনে ঝুঁকতে আগ্রহ জাগে?
যদি তাকে দেখলে আমার মনে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত না হয়, যদি তার আখলাক আমাকে মুগ্ধ না করে, যদি তার আমানতদারিতায় আমি ভরসা না পাই, যদি তার দ্বীনচর্চা আমাকে দ্বীনের ব্যাপারে আরো উৎসাহি না করে— তাহলে নিশ্চিতভাবে সে আমার ভালো বন্ধু হওয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য নয়। তার সঙ্গ ছেড়ে আরো ভালো সঙ্গ, আরো ভালো সার্কেল খুঁজে নেওয়া তখন আমার জন্য অতীব জরুরি।
[৪]
আসলে, নিজের ঈমানটাকে হেফাযতের উদ্দেশ্যে, নিজের তাকওয়াকে ঠিক রাখতে, নিজের দ্বীন চর্চাকে দিনের পর দিন উন্নত করতেই আমি এমন সার্কেল পছন্দ করি যাদের তাকওয়া থেকে, আমল থেকে, কাজ-কর্ম সহ সবকিছু থেকে প্রতিনিয়ত আমি কিছু না কিছু শিখতে পারবো। যাদের দেখলেই মনে হবে— ইশ! তার মতো যদি আমলদার হতে পারতাম! এমন কাউকে দেখলেই দৌঁড়ে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, 'তুমি কি আমার বন্ধু হবে?'

দূর্ভাগা নয়তো কী?

 

ধরুন— আপনি রাস্তায় হাঁটছেন এবং আপনার চারপাশে অসংখ্য ডায়মণ্ডের ছড়াছড়ি। আকাশ পানে তাকিয়ে দেখছেন যে, ঝুম বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে মহামূল্যবান মণি-মুক্তো!

কিন্তু, এই ডায়মণ্ড একটিবারের জন্য আপনি ধরেও দেখলেন না। চারপাশে সবাই কুড়িয়ে নিচ্ছে সেগুলো দু'হাত ভরে৷ কিন্তু আপনি বিরক্ত হয়ে ঘরে এসে দরোজা লাগিয়ে দিয়ে বসে রইলেন।
পরেরদিন যখন আপনি মানুষের কাছে বলতে যাবেন, 'জানো, কাল না আকাশ থেকে ডায়মণ্ড-বৃষ্টি হয়েছে। ওমা, সে কী এক ব্যাপার! পথের যেদিকে তাকাচ্ছি কেবল ডায়মণ্ড আর ডায়মণ্ড! মানুষগুলো হুড়োহুড়ি করে কুঁড়িয়ে নিচ্ছিলো সব। কিন্তু ডায়মণ্ডও বাপু ফুরোবার নয়। যে যেভাবে পারছে ঘরে তুলছে। আমার এতো বিরক্তি লাগলো, জানো? আমি সোজা ঘরে এসে দরোজা লাগিয়ে বসে রইলাম'।
আপনার মুখে এই গল্প শোনার পর আপনার গল্প-শ্রোতা আপনাকে সর্বপ্রথম যে কথাটা বলবে তা হচ্ছে— 'তুমি তো আস্ত বেকুব দেখছি! আকাশ থেকে ডায়মণ্ড ঝরে পড়ছে, আর তা কুড়িয়ে না নিয়ে তুমি ঘরের কপাট লাগিয়ে বসে রইলে?'
রামাদান নিয়ে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুব ভয়ানক একটা হাদিস আছে।
একবার মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, 'আ-মীন'।
তিনি সেদিন মোট তিনবার আ-মীন বলেছিলেন। কিন্তু সাহাবারা বুঝতে পারলেন না নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন প্রেক্ষিতে আ-মীন বললেন। তারা জিগ্যেশ করলেন, 'ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনাকে তিনবার আ-মীন বলতে শুনলাম। আপনি কি বলবেন কেনো আপনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে তিনবার আ-মীন বলেছেন?'
তিনবার আ-মীন বলার নেপথ্য কারণ সেদিন নবিজী সাহাবাদের জানিয়েছিলেন। সেই তিন কারণের একটা কারণ ছিলো এমন—
নবিজী বললেন, 'জিবরাঈল এসে বললো, যে ব্যক্তি রামাদান পেলো কিন্তু নিজের গুনাহসমূহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না, সে ধ্বংস হোক'।
জিবরাঈল আলাইহিস সালামের এমন ভীতিপ্রদ দুয়াতে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন— আ-মীন।
দুয়াটা অবিশ্বাস্যরকম ভয়ানক এইজন্যে যে— এই দুয়াটা করেছেন ফেরেশতাকূলের সরদার জিবরাঈল, এবং তাতে 'আ-মীন' বলেছেন নবি-কূলের সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এই দুয়া যে অতি-অবশ্যই কবুল হওয়ার— তা নিঃসন্দেহ।
রামাদান পেলো, কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে নিজের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না, এমন ব্যক্তিকে এতো অভাগা হিশেবে এই হাদিসে উল্লেখের কারণ কী?
কারণ হলো— রামাদান এমন একটা মাস যে মাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা জান্নাতের দরোজাগুলো খুলে দেন আর বন্ধ করে দেন জাহান্নামের দ্বার। এই মাসে প্রতিটা ভালো কাজ, ভালো আমল, ভালো নিয়্যাতের সওয়াব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেন বান্দার জন্যে। এতোকিছুর পরেও, এই মাসে এমন একটা রাত তিনি বরাদ্দ রেখেছেন, যে রাতটা হাজার মাসের চাইতে উত্তম! এই সুযোগ বছরে কেবল একবার-ই আসে।
রামাদান মাস আকাশ থেকে ডায়মণ্ড-বৃষ্টির দৃশ্যটার মতোই। এই মাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা তাঁর রহমত দ্বারা পুরো পৃথিবীকে ঢেকে দেন। এমন একটা মাসে, এতো এতো সুযোগ সামনে পেয়েও যে লোক তা খেলাচ্ছলে হারায় কিংবা পাত্তা দেয় না, অথবা গল্পের লোকটার মতো ঘরের দরোজা লাগিয়ে বসে থাকে, সে দূর্ভাগা নয়তো কী?

সুরা ইউসুফ থেকে আমি যা শিখেছি..

 


ভাইদের কাছ থেকে বালক ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কিনে নিয়ে বণিকদল এমন একজন লোকের কাছে তাঁকে বিক্রি করলো, যিনি ওই সময়ে ছিলেন মিশরের মন্ত্রী। তার পদবি ছিলো আযীয।

ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কিনতে পেরে আযীয তো মহাখুশী! বালক ইউসুফ আলাইহিস সালামকে নিয়ে এসে আযীয তার স্ত্রীকে বললেন, 'এর থাকবার সু-বন্দোবস্ত করো। হতে পারে এর দ্বারা আমরা উপকৃত হবো অথবা তাকে পুত্র হিশেবেও আমরা গ্রহণ করতে পারি।' - সুরা ইউসুফ ২১
যে ঘটনা-আবহের কথা আমরা বলছি, তখন হাটে-বাজারে দেদারসে মানুষ বিক্রি হতো। আমরা এখন যেভাবে হাট-বাজার থেকে হাস-মুরগি-গরু-ছাগল কিনি, তখনকার দিনে সেভাবে মানুষ বিক্রি হতো। ঘটনাচক্রে এমনই এক পরিস্থিতির মুখে এসে পড়লেন ইউসুফ আলাইহিস সালাম।
ইউসুফ আলাইহিস সালাম ছিলেন ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সন্তান। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ছিলেন একাধারে নবি এবং তাঁর ছিলো ধনাঢ্য সংসার। তার সংসারে দুঃখ-কষ্ট নেই, আর্থিক দুরাবস্থা নেই, অস্বচ্ছলতা নেই। একটা রাজকীয় পরিবার এবং পরিবেশে বেড়ে উঠছিলেন ইউসুফ আলাইহিস সালাম।
ভাবুন তো— একটা রাজকীয় পরিবেশ থেকে মুহূর্তের ব্যবধানে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কোথায় এসে দাঁড়াতে হলো? তাঁকে এসে দাঁড়াতে হলো এমন কিছু মানুষদের কাতারে যারা নিতান্তই গরীব আর অস্বচ্ছল। যাদের দিন কাটে দুঃখ-কষ্টে। যাদের ঘরে অন্ন সংস্থান নেই, পরিধানের কাপড় নেই। এমন কতিপয় মানুষদের কাতারে এসে পড়লেন তিনি যাদের চাল-চুলো নেই, ভাগ্যের ফেরে এখন যাদের ক্রীতদাস হয়ে জীবন কাটাতে হবে।
এ যেন আসমান থেকে মাটিতে পতিত হওয়ার মতো ঘটনা!
ইউসুফ আলাইহিস সালামের এই অবস্থা আমাকে যা শিক্ষা দেয় তা হচ্ছে— আমাদের জীবন সর্বদা একই গতিতে চলবে না। আর্থিক স্বচ্ছলতা, সুখ আর আনন্দ— কোনোকিছুই আমাদের জীবনে চিরস্থায়ী নয়। আজকে হয়তো আমার খাবার টেবিলে বাহারি পদের রান্না থাকছে, আগামিকাল আমার সামনে এক মুঠো ভাত না-ও জুটতে পারে। দামী কাপড় না হলে আজ হয়তো আমার চলছে না, আগামিকাল মানুষের দ্বারে দ্বারে একটুকরো কাপড় হন্যে হয়ে খোঁজা লাগতে পারে পরিধানের জন্য। সমানভাবে বিপরীতটাও সত্য। আজকের দুঃখ-কষ্ট, আজকের দুরাবস্থা আগামিকাল হয়তো স্বচ্ছলতা আর সামর্থ্যে ভরে উঠতে পারে। খোদ ইউসুফ আলাইহিস সালামের জীবনেই এর উদাহরণ আছে। তিনি ছিলেন এক রাজকীয় পরিবেশে। সেখান থেকে ক্রীতদাস হয়ে আসলেন মিশরে। মিশর থেকে তাঁকে কিনে নিলো সেখানকার মন্ত্রী এবং পুনরায় তাঁর জন্য নিশ্চিত করলো এক রাজকীয় পরিবেশ!
এই যে উত্থান-পতন, এটাই আমাদের জীবনের বাস্তবতা। এই দুই অবস্থার জন্যই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
মিশরের আযীয যখন ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কিনে এনে তাঁর স্ত্রীকে বললো, 'এর থাকবার সু-বন্দোবস্ত করো। হতে পারে এর দ্বারা আমরা উপকৃত হতে পারি', এই আয়াতটা নতুন এক ভাবনার দুয়ার যেন আমার সামনে উন্মুক্ত করে দিলো।
চিন্তা করুন— বালক ইউসুফ আলাইহিস সালাম যে একজন অসাধারণ মানবচরিত্র হবে ভবিষ্যতে, সে-ব্যাপারে আযীয কিন্তু কোনোভাবেই অবগত নয়। এই জ্ঞান তো আছে কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালার কাছেই৷ হঠাৎ করে দেখে কারো ব্যাপারে এরকম মন্তব্য করা— 'হতে পারে তাঁর দ্বারা আমরা উপকৃত হতে পারি', এটা কিন্তু এক অসাধারণ গুণের বহিঃপ্রকাশ। সেই গুণটা হলো— মানুষ চিনতে পারার ক্ষমতা।
আপনি বলতে পারেন— এরকম কোন ক্রীতদাস কিনলে তার কাছ থেকে যে-কেউই তো উপকৃত হওয়ার আশা করতে পারে। এখানে মানুষ চেনার কী আছে?
আপনার ভাবনা সত্যি হতো যদি আযীয তার স্ত্রীকে ইউসুফ আলাইহিস সালামের জন্য থাকার সু-বন্দোবস্ত করার কথা না বলতো। সাধারণ কোন ক্রীতদাস কিনে এনে কেউ কিন্তু তাকে রাজকীয় হালে রাখবার কথা ভাববে না। কিন্তু আযীয ভেবেছেন। ইউসুফ আলাইহিস সালামের মধ্যে যে অসাধারণত্ব আছে, তার খানিকটা আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি। এটাই তার মানুষ চেনার ক্ষমতা!
চারপাশে আমরা অসংখ্যবার শুনি, 'জীবনে মানুষ চিনতে শেখো, তাহলে ঠকবে কম'।
কথাটা কিন্তু মোটাদাগে সত্যি। জীবনে মানুষ চিনতে পারাটা এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যতোবেশি সঠিক মানুষকে জীবনে আমরা স্থান দেবো, সেটা হোক আমাদের বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা সুহৃদ হিশেবে, ঠকে যাওয়ার মাত্রা ততোই কমে যাবে আমাদের জীবন থেকে। আর, যতোবেশি ভুল মানুষ আমাদের জীবনে আসবে, ততোই কঠিন হয়ে উঠবে আমাদের জীবন।
আসুন আমরা আমাদের জীবনের ইউসুফদের চিনতে শিখি।
'সুরা ইউসুফ থেকে আমি যা শিখেছি-০৫'

Wednesday, 18 March 2020

একজন ইতালিয়ান ডাক্তারের লেখা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে । Coronavirus disease (COVID-19)

Coronavirus disease



একজন ইতালিয়ান ডাক্তারের লেখা --
আমাদের দেশে এখন ঘটে চলছে ভয়াবহ এক ট্রাজেডি। বৃদ্ধ রোগীরা মারা যাবার আগে চোখের পানি ফেলছেন।
কাছের মানুষদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাবার সৌভাগ্যও তাদের নেই। তারা একা একা মরতে চাননি, কিন্তু তাদের বিদায় জানাতে হচ্ছে ক্যামেরাকে।
তারা সজ্ঞানে, সমস্ত কষ্টকে সহ্য করতে করতে মরে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামী ও স্ত্রী একই দিনে মারা যাচ্ছেন। বৃদ্ধ দাদা-দাদি, নানা-নানীর তাদের নাতিদের মুখ শেষবারের মতও দেখতে পাচ্ছেননা।
এই রোগ flu-র চাইতেও ভয়াবহ। বিশ্বাস করুন, flu'র চাইতে অনেক ভিন্নরকমের অসুখ এটি। এই রোগকে দয়া করে তাই flu বলবেননা।
জ্বর অসম্ভব বেশি। রোগীর দম এমনভাবে বন্ধ হয়ে আসতে চায় যেন সে ডুবে যাচ্ছে। রোগীরা হাসপাতালে আসতে চায়না।
শুধু একটু অক্সিজেন পাবার জন্য তারা বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
এই রোগের বিরুদ্ধে খুব সামান্য কিছু ওষুধ কাজ করে। আমরা সাহায্য করার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু সবকিছুই নির্ভর করছে রোগীর অবস্থার উপর।
বৃদ্ধ রোগীরা এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধে পেরে উঠছেননা।
আমরা কাঁদছি। আমাদের নার্সরা কাঁদছে। সবাইকে বাঁচিয়ে তুলবার সামর্থ্য আমাদের নেই।
চোখের সামনে মেশিনে তাদের জীবন থেমে যেতে দেখছি প্রতিদিন। প্রচুর রোগী আসছে। অতি দ্রুত আমাদের আরও বেড প্রয়োজন হবে। সবার একই সমস্যা। সাধারণ নিউমোনিয়া। প্রচন্ড শক্তিশালী নিউমোনিয়া

আমাকে বলুন কোন flu এই ট্রাজেডির জন্ম দেয় ?
এই Flu অত্যন্ত সংক্রামক। এই ভাইরাসটি একেবারেই অন্যরকম।
কোন কোন মানুষের জন্য ভয়ংকর। আমাদের দেশে ৬৫ উর্দ্ধ বৃদ্ধদের প্রায় প্রত্যেকের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিংবা কোন না কোন রোগ রয়েছে। কোন কোন তরুণদের জন্যও এই রোগ ভয়ংকর।
এইসব তরুণ রোগীদের দেখলে কোন তরুণই নিজেকে নিয়ে নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারবেনা।
আমাদের হাসপাতালে কোনো সার্জারি আর হচ্ছেনা। বাচ্চাদের জন্ম, চোখের অপারেশন, কিংবা ত্বকের চিকিৎসা।
সার্জারি রুমগুলো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রূপান্তর করা হয়েছে ।
সবাই যুদ্ধ করছি কোরোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। প্রতি ঘন্টায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। ক্রমাগত হাতে আসছে টেস্ট রেজাল্ট। সব পজিটিভ। পজিটিভ। পজিটিভ!
সব রোগীর একরকমের কমপ্লেইন:
অসম্ভব জ্বর।
শ্বাস কষ্ট।
কাশি।
ডুবে যাবার মত দমবন্ধ অনুভূতি।
প্রায় সবাই ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ কেউ অক্সিজেন মাস্কের নিচেও শ্বাস নিতে পারছেননা। অক্সিজেন মেশিন এখন সোনার চাইতেও দামি।
বিশ্বাস করতে পারছিনা, কি দ্রুত এসব ঘটে গেল! আমরা সবাই ক্লান্ত।
কিন্তু কেউ থামতে চাইছিনা। সবাই মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করে চলছি। ডাক্তাররা নার্সদের মত অবিরাম কাজ করে চলছেন। দুই সপ্তাহ ধরে আমি বাসায় যাই না। আমার পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের জন্য আমি শংকিত।
সন্তানদের সঙ্গে ক্যামেরা ব্যবহার করে কথা বলছি। মাঝে মাঝে আমি স্ত্রীর ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদি। আমাদের কারো কোন দোষ নেই।
যারা আমাদের বলেছিল এই রোগটি তেমন ভয়ংকর নয়, সমস্ত দোষ তাদের। তারা বলেছিল এটি সাধারণ এক ধরনের Flu । কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর এখন অনেক বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে।
দয়া করে ঘরের বাইরে বের হবেননা। আমাদের কথা শুনুন। শুধুমাত্র ইমার্জেন্সি কারন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেননা।
সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করুন। প্রফেশনাল মাস্কগুলো আমাদের ব্যবহার করতে দিন।
মাস্কের অভাবে আমাদের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মুখে। কোন কোন ডাক্তার এখন আক্রান্ত।
তাদের পরিবারের অনেকেই জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাই নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করুন। বয়স্ক পরিবার পরিজনকে ঘরে থেকে বের হতে দেবেননা।
আমাদের পেশার কারণে আমরা ঘরে থাকতে পারছিনা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা আমাদের রোগীদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা নিজেদের শরীরে অসুখ ও ভগ্নহৃদয় নিয়ে ঘরে ফিরছি। যাদের বাঁচাতে পারছিনা তাদের শরীরের কষ্ট কমানোর চেষ্টা করছি। কাল সব ঠিক হয়ে গেলে আমাদের কথা সবাই ভুলে যাবে। আমরা ডাক্তারদের এইটাই পেশা।
তাই মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এই রোগ আপনাকে না ছুঁলেও সাবধানে থাকুন। জনসমাগম থেকে দূরে থাকুন। সিনেমায় যাবেননা, মিউজিয়ামে যাবেননা, খেলার মাঠে যাবেননা।
দয়া করে বৃদ্ধ মানুষগুলোর দুঃখ অনুভব করার চেষ্টা করুন। তাদের জীবন আপনাদের হাতে। এবং আপনারা আমাদের চাইতে বেশি মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম। আপনিই তাদের রক্ষা করতে পারেন।
লেখাটি শেয়ার করুন। শেয়ার করুন যেন সমস্ত ইতালি এই চিঠিটি পড়তে পারে। সমস্ত কিছু শেষ হবার আগেই যেন পড়তে পারে ।
Italy
Be Gavatseni hospital
Dr. Daniele Machini


Coronavirus disease (COVID-19)

Thursday, 25 July 2019

'মজার ব্যাপার হচ্ছে, শয়তান যে জিনিসটা সবচাইতে ভালো বুঝে সেটা হলো মানুষের সাইকোলোজি।

1.
'মজার ব্যাপার হচ্ছে, শয়তান যে জিনিসটা সবচাইতে ভালো বুঝে সেটা হলো মানুষের সাইকোলোজি। 
সে জানে মানুষ কিসে প্রলুব্ধ হয়, কিসে তার আগ্রহ। মানুষের সাইকোলোজি বুঝেই শয়তান নিজের টোপ ফেলে। যেমন, আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামকে সৃষ্টি করার পরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা তাদের জান্নাতে থাকতে দিয়েছিলেন। তবে, সাথে জুড়ে দিয়েছেন একটা শর্ত, একটা নিষেধাজ্ঞা। কি ছিলো সেই শর্ত? জান্নাতের সবখানে তারা বিচরণ করতে পারবে, ঘুরে বেড়াতে পারবে, সবকিছুই ভোগ করতে পারবে, তবে নির্দিষ্ট একটা গাছের কাছে তারা যেতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা মেনেই আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালাম জান্নাতে থাকতে শুরু করলেন। এই নিষেধাজ্ঞার ভিতর থেকেই শয়তান নিজের চালটা বের করে আনলো।
জান্নাতের পরমানন্দে অভিভূত হয়ে যান আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালাম। আহা! স্বপ্নও তো এতো সুন্দর হয়না। সেই অপরূপ নৈসর্গিগ স্বর্গোদ্যানে তারা খুব আনন্দের সাথেই দিন কাটাতে লাগলেন। এমনই আনন্দমুখর একটা দিনে, একদিন ইবলিশ শয়তান তাদের কাছে এলো। বললো, ‘আল্লাহ যে তোমাদের ঐ গাছটির নিকটে যেতে বারণ করলেন, তার কারণ জানো? তার কারণ হলো- তোমরা যদি ঐ গাছটার কাছে যাও এবং ঐ গাছের ফল খাও, তাহলে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে, নয়তো তোমরা এখানে চির অমর হয়ে যাবে। যাতে তোমরা ফেরেশতা বনে যাওয়া কিংবা চির অমর হওয়ার সুযোগ না পাও, সেজন্যেই কিন্তু আল্লাহ তোমাদের ঐ গাছের কাছে ঘেঁষতেও নিষেধ করেছেন’।
বলা বাহুল্য, সৃষ্টিগতভাবেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই বেশি। তারা হয়তো ভাবলো, ‘এতো পরমানন্দের সবখানে যাওয়ার, সবকিছু ছোঁয়ার, সবকিছু করার অনুমতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা দিয়েছেন, তাহলে কেবল ওই গাছটার নিকটেই বা কেনো যেতে বারণ করলেন? কি এমন আছে ওই গাছটায়?’
বুদ্ধিতে শয়তান মানুষের চেয়ে আরো কয়েক কাঠি সরেস। সে আরো বললো, ‘আমি কিন্তু তোমাদের শুভাকাঙ্খী। তোমাদের ভালো চাই বলেই কিন্তু কথাগুলো বললাম’। শয়তান যার শুভাকাঙ্খী হয়ে যায়, তার কি আর নতুন করে শত্রুর দরকার পড়ে? আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামেরও নতুন শত্রুর দরকার পড়েনি। শয়তানের এহেন প্ররোচনায় প্রতারিত হয়ে তারা দু’জনে শেষ পর্যন্ত ওই গাছের ফল খেয়ে বসে এবং জান্নাত থেকেই বিচ্যুত হয়।
শয়তানের প্ররোচনার ব্যাপারটা খেয়াল করুন। সে কিন্তু খুব সাধাসিধে, স্পষ্টভাষী, এবং হিতাকাঙ্ক্ষী সেজেই আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামের কাছে এসেছিলো, এবং তাদের সাইকোলোজি বুঝেই তাদের জন্য টোপ ফেলেছিলো। একটা নিষিদ্ধ জিনিসকে আকর্ষণের বস্তু বানিয়ে সেটার সাথে এমন দুটো জিনিসকে সে জুড়িয়ে দিয়েছে যা ক্ষণিকের জন্য আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামের মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। ফেরেশতা হয়ে যাওয়া কিংবা চির অমর হয়ে থাকা। মুহূর্তের জন্য এই দুটোর জন্য প্রলুব্ধ হয়ে উঠে তাদের মন। ফলে, তারা তাদের কৃত ওয়াদা ভুলে যায়, এবং ওই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে বসে।
বাস্তব জীবনে শয়তানের চালগুলো এমনই। সে মানুষকে এভাবেই বিভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট করে থাকে। সে কখনোই আপনার শত্রু বেশে আপনার সামনে হাজির হবেনা। সে আপনার সামনে আপনার চির হিতৈষী, চির শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে উপস্থিত হবে। সে প্রথমেই আপনার মন বুঝে নিবে। আপনি কোন জিনিসের প্রতি আসক্ত, আকর্ষিত সেটা জেনে নিয়ে, সেই মোতাবেক শয়তান আপনার জন্য টোপ ফেলবে।
সে আপনার মনে এই ধারণার উদয় করিয়ে দিবে যে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। আপনাকে সে বোঝাবে- ‘দেখ বাপু! হতে পারে দূর্গাপূজা হিন্দুদের উৎসব। সেই উৎসবে গেলে তুমিও যে হিন্দু হয়ে যাবে, এমনটি কিন্তু কোথাও লেখা নেই। তুমি সেখানে গেলেই যে তোমার মুসলমানিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়বে, তাও না। এটাকে তুমি হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব হিশেবে না দেখে কেবল একটা সাধারণ উৎসব হিশেবেই দেখো। তোমার বাড়ির পাশের একটা উৎসবই মনে করো। মনে করো সেখানে একটা মেলা হচ্ছে। তোমার সাদা মনে তো আর কোন কাঁদা নেই, তাইনা? ওই দেবীকে তো তুমি পূজোও করছোনা, তার পায়ে মাথাও ঠেকাচ্ছো না। কেবল একটু চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যেই যাচ্ছো। আরো কতোজনই তো যায়। এতে কি তাদের জাত যাচ্ছে, না ধর্ম লোপ পাচ্ছে?’
অথবা, শয়তান আপনাকে ওয়াসওয়াসা দিতে পারে এই বলে যে, ‘পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঘ-ভাল্লুক আর পেঁচার প্রতিমূর্তি মাথায় নিয়ে মিছিল করার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। বরং, এগুলো তোমাকে দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখাবে। তোমার মতোন কতো মুসলমানই তো এসব উৎসবে যায়, তাদের কি ধর্ম চলে গেছে?’
নতুবা, শয়তান আপনাকে বলবে, ‘একজন পর-নারীর সাথে বসে দু’দন্ড গল্প করলে, একটু সুখ-দুঃখের কথা বললে, দু’জনে কোথাও ঘুরতে গেলে, হাত ধরাধরি করে পার্কে হাঁটলে পাপ হয় না। তুমি তো আর তার সাথে অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছো না। তোমার মনে তো এরকম কোন অসৎ অভিপ্রায় নেই। তুমি তো তাকে কেবল বন্ধুই ভাবো। ছোটবোনের মতোই দেখো। তাহলে, তার সাথে এহেন সম্পর্ক রাখতে দোষ কি?’
শয়তানের টোপগুলো এমনই। আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী সেজে, আপনাকে আপাতঃ ‘ভালো বুদ্ধি’ দিয়ে সে আপনাকে দূর্গোপূজোয় নিয়ে ছাড়বে। পহেলা বৈশাখের বাঘ-ভাল্লুক আর পেঁচার মূর্তি মাথায় আপনাকে দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করাবে। আপনাকে সে পর-নারীর কাছাকাছি, পাশাপাশি নিয়ে যাবে আপনার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বুঝে। এভাবেই মূলত শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করে যার ওয়াদা সে আল্লাহর সাথে করেছিলো। ‘এবং আমি অবশ্যই তাদের পথভ্রষ্ট করবো’- আন নিসা ১১৯
[ অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি থেকে নেওয়া ]
লেখকঃ 
আরিফ আজাদ

মসজিদুল হারামে মাগরিবের সালাত শেষ হলো। প্রথম রাক'আতে ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করেছেন সুরা আদ-দোহা ।

  একটু আগেই মসজিদুল হারামে মাগরিবের সালাত শেষ হলো। প্রথম রাক'আতে ইমাম সাহেব তিলাওয়াত করেছেন সুরা আদ-দোহা । সব আয়াত একবার করে তিলাওয়াত কর...